হাতিরঝিল
হাতিরঝিল (Hatirjheel) নামটি শুনলেই মাথায় আসবে ঢাকার কথা। কারন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি দৃষ্টিনন্দন এলাকা হচ্ছে এই হাতিরঝিল। ইট পাথরের ব্যস্ত এই নগরীতে ক্লান্তিকর নাগরিক জীবনের সকল গ্লানি ও ক্লান্তি দূর করতে, বর্তমান সময়ে রাজধানীর হাতিরঝিল (hatirjheel) প্রকল্পটি হয়ে উঠেছে মনোরম একটি বিনোদন কেন্দ্র।
আপনি চাইলে দিনে বা রাতে যেকোন সময়েই হাতিরঝিলে ঘুরে আসতে পারেন বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। হাতিরঝিল পর্যটন কেন্দ্রটি ২০১৩ সালের ২ রা জানুয়ারী সর্বসাধারনের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকি করার জন্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন’ (এসডব্লিউও) কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের ততত্বাবধানে থেকেই এই পর্যটন কেন্দ্রটির কাজ সম্পন্ন হয়।
হাতিরঝিল প্রকল্পের (hatirjheel project) বেশ কিছু লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য গুলো হচ্ছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ করা, ময়লার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন, রাজধানীর যানজট নিরসন করা এবং সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করা।
এই হাতিরঝিল (hatirjheel) প্রকল্পটি চালুর ফলে ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, ও রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজার এরিয়া দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের চলাচলে বিশেষ সুবিধা হচ্ছে। স্থানটি অতন্ত্য সুন্দর। আর এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি নিয়তই ঢাকা ছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে দর্শনার্থীরা আসছে।
আরও পড়ুনঃ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর
হাতিরঝিল নাম করণের ইতিহাস
হাতিরঝিল তৈরী হওয়ার পিছনেও কিছু ইতিহাস রয়েছে। এই হাতিরঝিল (hatirjheel) এমনি এমনি হয় নি। এই হাতিরঝিলের নাম পূর্ব থেকেই কিন্তু হাতিরঝিল ছিল না। একটা সময় ছিল যখন এই হাতিরঝিল “বগা বিল” নামে পরিচিত ছিল। কারন পেছনেও আবার একটা কারন ছিল। কারন এখানে বসত বকের মেলা।
আর উল্লেখ্য আছে যে কোথাও কোথাও বককে বলা হত বগা। আর সেই থেকেই বগা বিলের উৎপত্তি হয়েছে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার বকের পদচারণা থাকত। আর বকেদের এমন আনাগনায় বগা বিল সাদা হয়ে থাকত বলেই এখান থেকে এই বিলের নাম হয়েছিল বগা বিল।
আজকে যেই স্থানে পীলখানা অবস্থিত সেখানে একটা সময় ছিল হাতিশালা। আর সে হাতিশালায় ছিল অনেক হাতি। হাতিগুলো পরিচালনার জন্য মাহুতও থাকত। মুলত যারা হাতি দেখা শোনা করেন তাদেরকে মাহুত বলে। এই পিলখানাই পূর্বের ধানমণ্ডি। আর এই ধানমন্ডি তখন আজকের ধানমন্ডির মত ছিল না।
কারন ধানমন্ডিতে সেই সময় প্রচুর শিয়াল ঘোরাফেরা করত। আর এই এলাকাটি ঢাকার উত্তর প্রান্তে ছিল বলে একে উত্তরের জাঁতা অর্থাৎ জঙ্গল বলা হতো।
মূলত ব্রিটিশ রাজার ধারাবাহিকতায় ভাওয়ালের রাজাদের পোষা হাতিগুলো রাখা হত এখনকার পিলখানায়। আর নিয়ম অনুযায়ী গোসল করানোর জন্যে হাতিগুলোকে নিয়মিত বগা বিলে নিয়ে যেত। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, ঢাকার পিলখানা থেকে বেগুনবাড়ি এলাকার বিলে যাওয়ার জন্য হাতিদের যেসব রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হত পরবর্তীতে সেসব এলাকার সাথে নাকি হাতি নামটি যুক্ত হয়ে যায়।
আর ঐ সময় এসব হাতিগুলোকে ঝিলে আনা নেওয়ার জন্যে বর্তমানে ঢাকায় যে এলিফ্যান্ট রোড আছে, সেই হাতিরপুল এলাকা ব্যবহার করা হয়। আর হাতিদের এভাবে আনা নেওয়ার কারণেই পরবর্তিতে এলাকার নামের সঙ্গে ‘হাতি’ শব্দটি যুক্ত হয়ে যায়। আর নিয়মিত হাতিদের গোসল করানোর কারণে এই বগা বিলের নাম হয়ে যায় “হাতির বিল“।
আর তারপর ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে বিল হয়ে যায় ঝিল। আর হাতিদের গোসল করানোর ফলে এক সময় হাতির বিলের নামও হয়ে যায় “হাতিরঝিল“। আর এভাবেই হাতিরঝিল এর নামকরণ করা হয়।
হাতিরঝিলের অবস্থান
হাতিরঝিল ঢাকায় অবস্থিত। হাতিরঝিল (hatirjheel) শুরু হয়েছে ঢাকার কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁ হোটেল থেকে বনশ্রী পর্যন্ত। তাছাড়া পুরো হাতিরঝিলকেজ ঘিরে আছে ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, নিকেতন এবং মগবাজার এলাকা। অর্থাৎ হাতিরঝিল যেতে চাইলস উল্লেখিত প্রতিটি এলাকা দিয়েই হাতিরঝিলে প্রবেশ করা যাবে।
হাতিরঝিল প্রকল্পর পেছনের ইতিহাস
একটা সময় ছিল যখন টলমলে সুন্দর পানির দেখা মিলত এই ঝিলে আসলে। তবে সময়ের পরিক্রমায় হাতিরঝিল (hatirjheel dhaka) পরিনত হয়ে যায় নোংরা নর্দমায়। পাশাপাশি তা হয়ে উঠে বস্তিবাসীদের থাকার জায়গায়। আর এর পর থেকেই শুরু হয় সমাজের বিত্তবান ক্ষমতাশীল লোকদের জমি দখল করে নেওয়ার তুমুল লড়াই। তার একটি উদাহরণ হলো আজকের বিজিএমইএ ভবনটি। যা কিনা এখনো বেদখলদারিত্ব থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
এটা নিয়ে পরিবেশবাদী ও সাধারন মানুষজন অনেক আন্দোলন করেন। কিন্তু তেমন কোন লাভ হয় নি। আর সে সমযয়েই এই হাতিরঝিলকে অবৈধ দখলদার এবং জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় অনেক আন্দোলনও হয়েছিল। তখন আন্দোলনকারীদের পাশে ছিলেন স্যার আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ।
তখন সোনারগাঁও হোটেলের বিপরীতে পান্থকুঞ্জের পাশেই বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মানববন্ধন করেছিল। সে আন্দোলনের মূল স্লোগান ছিল ‘হাতিরঝিল বাঁচাও’ নিয়ে। সেই সময় এই আন্দোলনে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারও দাঁড়িয়েছিলেন।
সে সময় দিন দিন হাতিরঝিলকে ঘিরে বাড়ছিল অপরাধমূলক নানান কর্মকান্ড। মাদকাসক্তদের একটি আস্তানায় পরিণত হয়েছিল এই হাতিরঝিল। আর তাই অবৈধ দখল থেকে রক্ষা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং সৌন্দর্য্য বাড়াতে
সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন’ (এসডব্লিউও) এর হাতে হাতিরঝিল প্রকল্পটির (hatirjheel project) দায়িত্ব দেয়। আর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে পাঁচ বছরে হাতিরঝিলকে শহরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে তারা।
আর এখন সেখানে গেলেই আপনার চোখে পরবে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ। একটা সময় যখন এখানের পানি নর্দমায় পরিনত ছিল, আজকের সময়ে সেই ঝিলের পানি সারা বছর স্বচ্ছ রাখতে পাম্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা আছে। আছে ময়লা পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থাও আছে। কখনো যদি হাতিরঝিল না আসেন, তাহলে একবার আসেই দেখুন পরিবেশটা সত্যিই মুগ্ধ করবে আপনাকে।
হাতিরঝিলে কিভাবে যাবেন
হাতিরঝিল (hatirjheel) যেতে হলে আপনাকে আগে ঢাকায় আসতে হবে। আর ঢাকায় আসার পর বাস কিংবা সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকার যে কোন এলাকা থেকেই আপনি চাইলে হাতির ঝিলে আসতে পারবেন। তাছাড়াও পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখার জন্য আছে চক্রাকার বাস সার্ভিসও।
বর্তমানে চারটি মিনিবাস আছে যেখানে ২৯ টির মত আসন আছে, আর হাতিরঝিলের চারপাশের দশটি স্টপেজ থেকেই এউ বাসগুলো যাত্রী তুলে এবং নামিয়ে দেয়। এই বাসের টিকেট পাওয়া যাবে রামপুরা, মধুবাগ, এফডিসি মোড়, বৌবাজার, শুটিং ক্লাব ও মেরুল বাড্ডা এই ছয়টি টিকেট কাউন্টারে।
আর এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে সর্বনিম্ন ভাড়া হবে জনপ্রতি ১০ টাকা। আর যদি কেউ রামপুরা থেকে কারওয়ান বাজার যায় তাহলে সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ১৫ টাকা জনপ্রতি। আর রয়েছে আরও সুযোগ। কারন বাসে করে পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখতে পারবেন মাত্র ৩০ টাকায়।
হাতিরঝিল (hatirjheel) এলাকায় প্রতিদিনই বাস চলাচল শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে এবং এই বাস রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে। আর সরকারি ছুটির দিন অথবা কোনো উৎসব উপলক্ষেও চক্রাকার বাস চলাচল বন্ধ থাকে না। তবে হাতিরঝিলে অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য বিশেষ কোন লোকাল সার্ভিস বাস আপনি পাবেন না। তবে ব্যক্তিমালিকানার কিছু গারি আছে যেগুলো কারওয়ান বাজার থেকে রামপুরা পর্যন্ত চলাচল করে।
হাতিরঝিলে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা
অনেকেই আছেন যারা ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে থেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার কিংবা মোটরসাইকেল করে হাতিরঝিলে আসেন, যারা তাদের ব্যাক্তিগত গাড়িতে এসে থাকেন তাহলে হয়ত তারা ভাবছেন, নিজের গাড়ি নিয়ে একটু ঘুরা ফেরা করবেন, একটু খানি ছবি তুলবেন।
কিন্তু নিজের গাড়িটি কোথায় রাখবেন? আপনার চিন্তা করার কিছুই নেই, কারন এখানে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থাও আছে। আপনি নির্দিষ্ট পার্কিং জোনে আপনার গাড়িটি রেখে বেশ নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
এখনে প্রতি ২ ঘন্টায় মোটর সাইকেলের জন্য পার্কিং চার্জ রাখে মাত্র ২০ টাকা, সিএনজি বা বেবি ট্যাক্সির জন্যও রাখবে মাত্র ২০ টাকা, আর প্রাইভেট কারের জন্য রাখে ৩০ টাকার মত, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্যও রাখে ৩০ টাকা, মিনি কোস্টারের জন্য চার্জ ৫০ টাকা এবংবাস ও ট্রাকের জন্য রাখে ১০০ টাকার মত।
আর আপনি যদি কোন সামরিক ব্যক্তি হয়ে অর্থাৎ সেনাবাহিনীর কোন লোক হয়ে থাকেন তাহলে হাতিরঝিলের সড়কের পাশে সামরিক পার্কিং জোন আছে, যেখানে আপনি আপনার গাড়ি রাখলে ফ্রিতে রাখতে পারবেনন, কারন সেখানে কোনো পার্কিং চার্জ দিতে হবে না।
নৌ-পথে হাতিরঝিল যাওয়ার ব্যবস্থা
হাতিরঝিলের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের আরেকটি সুন্দর ব্যবস্থা হল ওয়াটার ট্যাক্সি। এফডিসির মোড়ে যে জায়গা থেকে বাসগুলো ছাড়ে তার ঠিকবিপরীত দিকেই রয়েছে এই ওয়াটার ট্যাক্সির ল্যান্ডিং স্টেশন। এখান থেকে দুইটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে মূলত এই ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো ছাড়ে।
একটি ছাড়ে মূলত গুদারাঘাটের উদ্দেশ্যে এবং অন্যটি রামপুরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আপনি যদি গুদারাঘাটে যান তাহলে তার জন্য আপনাকে ৩০ টাকা দিতে হবে আর রামপুরার জন্য আপনাকে ২৫ টাকার মত ভাড়া গুনতে হবে। তবে আপনার যদি ১০ বছরের কম বয়সী বাচ্চা থাকে তাহলে তার জন্যে জন্য কোনো ভাড়া লাগবে না।
আর যেহেতু এটি একটি পর পর জায়গায় ভেদে দাঁরায় না বা নামিয়ে দেয় না তাই ওয়াটার ট্যাক্সি যাতায়াতের তুলনায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য বেশ ভালো। তাছাড়া এটির ব্যবস্থাপনা বেশ নিরাপদ ও অবাক করার মত জারন ওয়াটার ট্যাক্সিতে প্রতিটি যাত্রীর জন্যই আছে লাইফ জ্যাকেট এর সুব্যবস্থা । এই বাহনের আর একটি সৌন্দর্য হলো প্রতিটি ওয়াটার ট্যাক্সিতেই উড়ে বাংলাদেশের পতাকা।
আরও পড়ুনঃ টাংগুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
হাতিরঝিলে যা যা দেখবেন
হাতিরঝিল অত্যন্ত সুন্দর একটি জায়গা। ব্যস্ত ঢাকার বুকে যেন এক টুকরো সুখের স্বর্গ। সুন্দর পরিবেশ, স্বচ্ছ জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আর এই ঝিলের দৃশ্য দেখতে অতুলনীয় একটি সফর দেওয়া যায় পানির পথের মাধ্যমে। ২০১৭ সালের দিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে হাতিরঝিলে (hatirjheel lake) নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এর কারন ছিল রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরে এটি ছাড়া আর কোন জলজ পথ না থাকার কারণে। এখানে আসলে আপনি দেখতে পারবেন রাস্তার পাশে লাগানো হয়েছে সারিবদ্ধ বিভিন্ন দেশীয় ফুলের গাছ। তাছাড়াও রয়েছে খেজুর গাছ আর তালগাছের লম্বা সারি। এখানে আছে বসার জন্যে নানান জায়গায়, আছে বসার বেঞ্চও। এ ছাড়া ঝিলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্যে দর্শনার্থীদের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থাও।
এখানে বেশ সুন্দর লাইটিং শো এর ব্যবস্থা আছে। রঙিন লাইটগুলো দেখতে বেশ ঝলমলে। আর ঝিলের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে নানান রঙের এই লাইট থেকে আসা। আর আলোর সেই উৎসে চলছে জলের নৃত্য তথা হাতিরঝিল ফোয়ারা। এই লাইট এর শো শুরু হয় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় আর তা চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।
এবং ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর তা দেখানো হত। কিন্ত এখন বর্তমানে লোকজন কম থাকায় প্রতিদিন আর এটি দেখানো হয় না। তবে আপনি যদি এই শো টি দেখতে চান তাহলে ছুটির দিন যাওয়াটাই অনেক ভালো হবে।
হাতিরঝিল রেস্টুরেন্ট ও খাবার (hatirjheel restaurant)
হাতিরঝিল (hatirjheel) অনেক্ষণ ঘুরা ফেরা করে নিশ্চয়ই আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন? খিদেও পাবে। তবে কোন সমস্যা নেই কারন হাতিরঝিলেই রয়েছে স্ট্রিট ফুড থেকে নানান রেস্টুরেন্টে মজার সব খাবারের আয়োজন। হাতিরঝিলের অভিজাত একটি রেস্টুরেন্ট হিসেবে ক্রুয়া থাই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এটি মূলত নিকেতন আড়ং এর পরেই রয়েছে। এই রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। তাছাড়াও হাতিরঝিলে আর একটি রেস্টুরেন্ট হল ওয়াটার ট্যাক্সি টার্মিনাল ২ এ। এটি এফডিসি মোড়ের দিকে দিয়ে রয়েছে। এছাড়াও হাতিরঝিলের বিভিন্ন পয়েন্টে আপনি পাবেন নানান ফুড কার্টে। যেখানে বাহারী খাবার সাজিয়ে বসে আছে দোকানদাররা।
হাতিরঝিলে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা
ঘুরতে গেলে সবারই একটু ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ব্যক্তিগত সাজসজ্জা কিংবা শৌচকার্য সম্পন্ন করার জন্য ওয়াশরুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। আর হাতিরঝিলেও ওয়াশরুমের সুব্যবস্থা রয়েছে।
এখানে নারী আর পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা পরিচ্ছন্ন ওয়াশরুম এবং টয়লেট সু-ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ১০ টাকা করে টিকিট কাটতে হয় এখানকার ওয়াশ রুম গুলো ব্যবহারের জন্য। তবে ভেতরে গেলে অবশ্যই জুতা জুতা খুলে প্রবেশ করতে হবে। এখানে পাবলিক ওয়াশরুম কাম টয়লেটটির অবস্থান হলো গুলশান পুলিস প্লাজার সামনে।
হাতিরঝিলের নিরাপত্তা কেমন
বলা জায় দিনের বেলায় সেখানে গেলে আপনি বেশ ভালো ভানেই নিরাপদের থাকবেন। কারন দিলের বেলা হাতিরঝিল (hatirjheel park) মোটামোটিভাবে নিরাপদ। কিন্তু রাত যখন বাড়ে বাড়ার সাথে সাথেই হাতিরঝিলের নানা জায়গায় নিরাপত্তা কমতে থাকে।
কারন রাতের অন্ধকারে সড়কের দুইপাশে, হাতিরঝিল ব্রিজের (hatirjheel bridge) উপরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলেও, নির্জন যে জায়গাগুলো আছে সেখানে ছিনতাইকারীদের কবলে অনেককেই পড়তে হয়। আর এজন্য পথযাত্রীরা চলাচলের সময় প্রায়ই বিরম্বনায় পড়ে থাকেন।
বিশেষ করে যারা যুগল ভ্রমণকারী আছেন তাদের প্রতি ছিনতাইকারীদের নজর যেন একটু বেশি থাকে। ছিনতাইকারীরা এক্ষেত্রে প্রথমে নানান উপায় অবলম্বন করে ঝগড়া বাঁধায়, এরপর ব্ল্যাকমেইল তাদের কাছ থেকে সব লুট করে নিয়ে যায়। আর এসব ছিনতাইকারীরা এই ঝিলে রাতের বেলা পথচারীর বেশে ধরে ঘুরে বেড়ায়।
আর অপেক্ষায় থাকে কখন তাদের সুযোগ আসবে। তারা দর্শনার্থীদের লক্ষ্য করতে থাকে। তাই রাতের বেলাতে গেলে নির্জন জায়গাগুলো চেষ্টা করবেন এড়িয়ে চলার জন্য। তবে ছিনতাইকারী ছাড়াও ইদানিং সময়ে এখানে বেশ কিছু স্থানে আবার মাদক সেবীদের আড্ডা ও বাড়ছে।
তাছাড়া অনেকেই আছেন যারা গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় ড্রাইভ রেস করতে চলে আসেন। বিশেষ করে গুলশানের পুলিশ প্লাজায় দিক দিয়ে গুলশান থেকে রাত বাড়ার সাথে সাথেই দামী গাড়ি নিয়ে ধনীর দুলালরা রেসে নেমে পড়ে এখানে। এ সময় অনেক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। তাই রাতে যখন হাতিরঝির ঘুরতে আসবেন অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
হাতিরঝিলের আসে পাশে আরও দর্শনীয় স্থান
আপনার হাতে যদি সময় থাকে তাহলে আপনি চাইলে হাতিরঝিলের আসে পাশে যে সকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সেগুলি ঘুরে দেখে আস্তে পারেন সেগুলি হলঃ পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা, ধানমুন্দি লেক, সোনারগাঁ হোটেল এবং আহসান মুঞ্জিল ইত্যাদি সহ আরও অনেক স্থান।
শেষ কথা
ঢাকা মানেই যেন কোলাহল সারাদিন ব্যস্ততা। এই শহরের বিপর্যস্ত জনজীবন, ধুলোবালিতে ধূসরিত, আর কালোর ধোঁয়ার বিষাক্ত বাতাসে যেন ছেয়ে গেছে পুরো পরিবেশ, কোথাও অবসরের চিহ্নটুকু নেই। নেই দেখার মতো কোনো শান্ত, মনোরোম ও স্নিগ্ধ দৃশ্য।
আর নগরবাসীদের ক্লান্তি হতাশা ও বেদনার মধ্যেও একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হল এই হাতিরঝিল। একটু শান্তি খুঁজে পেতে, মনটাকে প্রফুল্ল করতে এই বিনোদন কেন্দ্রের কোন বিকল্প নেই। তাউ চাইলেই আপনি আপনার প্রিয়জনের হাতটি ধরে আসতেই পারেন হাতিরঝিলে। ছুটির দিনগুলোতে বন্ধুদের সাথে মোটরসাইকেলে করে একটি জার্নি করা যেতেই পারে। দল বেঁধে আসা যেতেই পারে হাতিরঝিলে।
সব শেষে বলব আসুন, দেখুন উপভোগ করুন। কারণ ঢাকা নিয়ে যাদের যে ঢাকা শহর হল কোলাহলের শহর, তাদের বলবো হাতিরঝিলে আসলে আপনার মনেই হবে না আপনি কোন কোলাহলের শহরে এসেছেন, এসেছেন কোন ব্যস্ত নগরীতে।
হাতিরঝিল নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১। হাতিরঝিল কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ হাতিরঝিল ঢাকায় অবস্থিত।
২। হাতিরঝিল কিভাবে যাব?
উত্তরঃ ঢাকার যে কোন প্রান্ত থেকে বাসে কিম্বা সিএনজি করে হাতিরঝিল আসা যায়। হাতিরঝিলে ঘুরে দেখার জন্যে আছে বাস সার্ভিস। আপাতত ২৯ আসনের চারটি মিনিবাস হাতিরঝিলের চারপাশের দশটি স্টপেজ থেকে যাত্রী তুলবে এবং নামিয়ে দেবে। টিকেট পাওয়া যাবে রামপুরা, মধুবাগ, এফডিসি মোড়, বৌবাজার, শুটিং ক্লাব ও মেরুল বাড্ডার ছয় কাউন্টারে।
৩। হাতিরঝিলের স্থপতি কে?
উত্তরঃ হাতির ঝিল – এর নকশার পরিকল্পনা করেন স্থপতি এহসান খান।
আরও পড়ুন-
সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ